অ্যামিবিক আমাশয়ের লক্ষণ এবং হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ব্যবহার/The symptoms of Amoebic Dysentery and the uses of homeopathic medicine,

অ্যামিবিক আমাশয়ের লক্ষণ এবং হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ব্যবহার/The symptoms of Amoebic Dysentery and the uses of homeopathic medicine,


আজ আমরা অ্যামিবিক আমাশয়ের লক্ষণ এবং হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কে জানব,


অ্যামিবিক আমাশয়ের কারণ —


Entamoeba Hystolytica নামে এক ধরণের এককোষ জাতীয়। নড়াচড়া করতে সক্ষম, দ্রুত বর্ধমান বীজাণু, এই রােগের কারণ। এই বীজাণু, পেটে গেলে তারা দ্রুত বর্ধিত হয় এবং বৃহদন্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রদাহের সষ্টি করে থাকে। বৃহদন্ত্রে প্রদাহ, ঘা, ক্ষত, Ulcer প্রভৃতি সষ্টি করলে, যাকে বলে Intestinal. ulcer প্রভৃতি সষ্টি করলে, তাকে বলে Colitis এবং দুটি অন্ত্রেই এ রুপ হলে তাকে বলে Enterocolitis রােগ।

এই প্রদাহের ফলে বার বার কুহুন ও মলত্যাগ হয়। অনেক সময় এই রােগের উপসর্গ হিসাবে লিভারের প্রদাহ (Hepatitis), লিভারের ফোঁড়া (Liver Abcess) প্রভৃতি হতে পারে।

এই রােগ সাধারণতঃ গ্রীষ্ম মণ্ডল ও নাতিশীতােষ্ণ মণ্ডলে (Tropical and Sub-Tropical Regions) বেশি পরিব্যাপ্ত। শীত, গ্রীষ্ম, সব ঋতুতেই এই রােগ হতে পারে। দূষিত খাদ্য, পচা বা বাসি খাদ্য, মাছি, জল প্রভৃতির মাধ্যমে এই রােগ বিস্তার লাভ করে থাকে। Amoeba-র যে Cyst থাকে, তারা পেটে গিয়ে রােগ সৃষ্টি করে। Cyst গলি দ্রুত অসংখ্য Amoeba-র জন্ম দেয় এবং তাদের দ্রুত বংশবৃদ্ধি হতে থাকে।

তারা পেটের ঝিল্লীতে (Mucous-membrane) প্রদাহ সৃষ্টি করে থাকে। অনেক সময় Lymphatics-এর মধ্য দিয়ে ঝিল্লী থেকে এগুলি Submucous cost এ বাসা বাঁধে। Mucous layer এবং ধমনীতে বা শিরাতেও এরা গিয়ে নানা উপদ্রব ঘটায় বা রক্ত প্রবাহ রুদ্ধ (Thrombosis ) ঘটাতে পারে।


আপনি পড়তেও পছন্দ করতে পারেন: কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ এবং হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ব্যবহার,


অ্যামিবিক আমাশয়ের লক্ষণ –


বিকাশের তারতম্য অনুযায়ী এই রােগকে মােট তিনভাগে ভাগ করা হয়— 

1. উগ্র ধরণের বা Acute Type. 

2. দীর্ঘস্থায়ী বা Chronic Type. 

3. অব্যক্ত ধরণের বা Latent Type.


উগ্ৰ ধরনের -

1. এটি হঠাৎ আরম্ভ করে। কয়েকদিন আগে থেকে মাঝে মাঝে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে থাকে ও পরে হঠাৎ উদরাময় শুরু হয়ে যায়।

2. পেটের তলদেশে বেদনা দেখা যায়। কখনাে বা ডান কোখে, নাভির চারদিকে ব্যথা হয়। কখনাে বেদনা খুব কষ্টদায়ক হয়ে উঠতে পারে।

3. পায়খানার সময় কুহুন ও ব্যথা হয়। পায়খানা হবার পর ব্যথা একটু, কমে পরে আবার পায়খানা হয়। এইভাবে চলতে থাকে।

4. পায়খানা দিনে 7–15 বার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। 5. মলে দুর্গন্ধ থাকে, কখনাে টক গন্ধ বের হয়। 6. জিহবা ভেজা ও মাঝে মাঝে লেপাবৃত দেখা যায়। 7. কখনাে কখনাে বমিভাব বা বমি হতে পারে। 8. জর হতে পারে, তবে তা অল্প হয়। 9. মাঝে মাঝে পেটে খুব মােচড়ানাে ব্যথা হতে দেখা যায়। 10. মল পরীক্ষা করলে তাতে Amoeba বা তার Cyst দেখা যায়। কখনাে মলে Mucous-এর সঙ্গে রক্তও সামান্য দেখা দিতে পারে। মলে পুঁজ বা Pus Cell থাকে না।


দীর্ঘস্থায়ী ধরনের-


1. উগ্র আক্রমণের পর চিকিৎসা পুর্ণভাবে না হলে বা কিছু, চিকিৎসা করে তা বন্ধ করে দিলে, দীর্ঘস্থায়ী ধরনের রােগ হয়। এতে অন্য লক্ষণ থাকে না। কেবল। পায়খানার সঙ্গে সামান্য কুথন ও অল্প অল্প আম পড়ে।

2. রােগী ভুগে ভুগে দুর্বল হয়। তার দুর্বলতা, রক্তশুন্যতা প্রভৃতি লক্ষণ। দেখা যায়।

3. মাঝে মাঝে হঠাৎ রােগ বাড়ে এবং উদরাময় হয় ও তার সঙ্গে আম পড়ে।

4. মাঝে মাঝে বেশি খেলে হঠাৎ পেটের গােলমাল হয় ও অজীর্ণ বা উদরাময়।

হয়।

5. রােগীরা রােগের বাহন বা Carrier হয় এবং তাদের থেকে অন্যদের মধ্যেও রােগ ছড়াতে পারে। তাই রােগ নিমূল করার জন্য চেষ্টাও করা অবশ্য কর্তব্য।

6. মল পরীক্ষা করলে Mucous ও Cyst পাওয়া যায়।

7. অনেক সময় দীর্ঘদিন ক্রনিক রােগে ভুগলে বৃহৎ অন্ত্রে বা ক্ষুদ্র অন্ত্রে আলসার বা Enterocolitis হয়। তা থেকে পরে আরও নানা রােগ দেখা দিতে পারে।


অব্যক্ত ধরণের-


উগ্র আমাশয় থেকে এদের পরে রােগ সেরে অব্যক্তভাবে দাঁড়ায়। এদের কোন বাহ্যিক লক্ষণ থাকে না। বােঝা যায় না যে এদের আমাশয় রােগ আছে। তবে এরা সর্বদা Carrier হয়ে দাঁড়ায়। পরে এদের মাঝে মাঝে অজীর্ণ, অক্ষুধা প্রভৃতি হতে পারে। এ থেকে অবশেষে নানা জটিল উপসর্গ দেখা দিতে পারে।


আপনি পড়তেও পছন্দ করতে পারেন: ডায়রিয়ার লক্ষণ এবং হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ব্যবহার


অ্যামিবিক আমাশয়ের জটিল উপসর্গ (Complications )-


1. আমাশয় ক্রনিক বা Latent হলে, পরে তা থেকে নানা জটিল উপসর্গ দেখা দেয়। অন্ত্রের আলসার বা Enterocolitis হয়। অন্ত্রে ঘা বা ক্ষত ধরণের হয়।

2. বুকে বা পিঠে ব্যথা দেখা দিতে পারে।  

3. অন্ত্রে Gangrene হতে পারে বা তা থেকে পরে Intestinal ক্যানসার। হতে পারে। 

 4. লিভার আক্রান্ত হয়ে Hepattis রােগ হতে পারে। 

5. পাণ্ড, সন্ন্যাস বা জণ্ডিস রােগ হতে পারে।

6. Liver Abcess এর ফলে হতে পারে। তারজন্য রােগীর মত্যু পর্যন্ত হওয়া সম্ভব।

রোগ নির্ণয় উদরাময় ব্যাসিলারী আমাশয় এবং কলেরা—এদের মধ্যে কি কি পার্থক্য তা এরপরে আলোচনা করা হবে। তাছাড়া রােগ নির্ণয় করার শ্রেষ্ঠ উপায় হলাে অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে মল পরীক্ষা করা। মলে Amoeba-র Cyst বা Bacilli—কি পাওয়া যায় তা দেখে চিকিৎসা করলে। ভাল হয় এবং তার জন্যে সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়।


আপনি পড়তেও পছন্দ করতে পারেন:  High blood pressure: the biggest danger is lack of information.


অ্যামিবিক আমাশয়ের চিকিৎসা-


এই রােগের একটি প্রধান উৎকৃষ্ট ঔষধ হলাে—Mercurius-6।

পায়খানার সময় কোঁথানি এবং পায়খানার শেষে কিছক্ষণ কোঁথানি এই সব লক্ষণে, Nux Vomica- 6,30।

শিকনির মত সাদা আম, কখনও বা সঙ্গে আম অল্প পরিমাণে হয়, ভেদ বমি বিভিন্নবর্ণের বা প্রকৃতির। ঘি, তেল বা চর্বিযুক্ত গুরুপাক দ্রব্য খেয়ে আমাশয়, তৃষ্ণা না থাকা, রাত্রে পীড়ার বৃদ্ধি, এই সব লক্ষণে, Pulsatilla- 6।

Hydrocotyle A দুবেলা 5 ফোঁটা করে সেবন করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

প্রবল বমি বা বমির লক্ষণে, (বিশেষতঃ কাঁচা ফল বা টক জিনিস খেয়ে আমাশয়। হলে।), Ipecacunha- 6।

পেটে দারুণ বেদনা, যন্ত্রণায় কুচকে যাওয়া, পেট চেপে ধরলে যন্ত্রণায় উপশম হয়। প্রভৃতি লক্ষণে, Colocynth- 6।

পেট গড় গড় করা, কোঁথান, বেদনা (বিশেষতঃ পুরাতন আমাশয় শ্লেষ্মা বা রক্ত যুক্ত মল প্রভৃতি লক্ষণে, Aloe Soc- 6।

রক্তমিশ্রিত দুর্গন্ধযুক্ত মল, প্রবল তৃষ্ণা, অস্থিরতা প্রভৃতি লক্ষণে, Ars.Alb- 6, 30।

দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু ও পেটফাঁপা, উদগার থাকলে Carbo Veg- 6,30। পেটে খুৰ বাথায় Megenisa Phos-3x বা 6x গরম জলসহ। হঠাৎ আমাশয় এবং জরে Ferrum Phos- 3x, 6x। সবুজ বা চিটে গুড়ের মত পায়খানা, বমিভাবে, Ipecacunha- 3x,6x। সাদা মল ও ব্যথা। রাতে বৃদ্ধি, Pulsatilla- 3,30।


আপনি পড়তেও পছন্দ করতে পারেন:  The symptoms of  Constipation and uses of homeopathic medicine,


অ্যামিবিক আমাশয়ের আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা-


1. থানকুনি পাতার ঝােল বা পাতার রস সব রকম আমাশয়ে উপকারী। থানকুনি ও কাঁচকলার হালকা ঝােল-ভাত সুপথ্য। অবশ্য তা পায়খানা একটু, কমলে খেতে হবে।

2. পেটে ঠাণ্ডা লাগানাে উচিত নয়। প্রয়ােজন হলে পেট গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা ভাল।

3. রােগ অবস্থায় তরল পথ্য,বার্লি, মিছরীর জল, ডাব Hydro” protein বা Protinex খেতে হবে। রােগ সেরে এলে সরু চালের ভাত, গাঁদাল পাতার ঝােল, থানকুনি পাতার ঝােল, সিঙ্গি বা মাগর বা জ্যান্ত চারাপােনা মাছ; কাঁচকলা সিদ্ধ, বেলসিদ্ধ বা পােড়া বেশ উপকারী পথ্য।


দাবিত্যাগ:-

এই নিবন্ধটি কঠোরভাবে শুধুমাত্র তথ্যের উদ্দেশ্যে এবং এটি একটি রোগ নির্ণয়, চিকিত্সা বা পেশাদার চিকিৎসা পরামর্শ, রোগ নির্ণয় এবং চিকিত্সার বিকল্প হিসাবে নয়। 

আমাদের বিষয়বস্তু বা এর সাথে সম্পর্কিত কিছু ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট কোন ক্ষতি, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, অসুস্থতা এবং স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য এই ব্লগটি কোন দায়বদ্ধতা নেয় না।



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.